ঢাকা , বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫ , ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
১৪ ভারতীয় জেলে কারাগারে ফুলবাড়িয়ার সাবেক এমপি পত্নী হাসিনা উদ্দিনের জানাজা সম্পন্ন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদীতে ঘুরতে গিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু জলঢাকায় বাকপ্রতিবন্ধী রঞ্জনার মানবেতর জীবন সংগ্রাম বরগুনায় কৃষি সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান বিষয়ক মতবিনিয় সভা অনুষ্ঠিত শিক্ষাব্যবস্থার ইসলামীকরণসহ বেশ কিছু দাবি জামায়াতের সুন্দরবন মার্কেটে অবৈধ দোকানে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ : রাষ্ট্রপতি সাত কলেজকে চার হাইব্রিড মডেলে স্কুলে বিভক্ত করে পাঠদান ঢাকায় কাউন্সিলরকে না পেয়ে বোনকে গুলি করে হত্যা জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ৬ সাংবাদিকের বিচার নিয়ে আরএসএফ-এর বিবৃতি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষায় ‘মঞ্চ ৭১’-এর ৫ দফা দাবি ফরিদপুরে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও দোয়া আমতলীতে ৫ আগষ্ট পালিত,জুলাই শহীদদের জন্য দোয়া কামনা আমতলীতে তৃনমুলে বিট পুলিশিং মিটিং অনুষ্ঠিতব্য রাজনৈতিক সহিংসতায় ১১ মাসে নিহত ১২১ আহত ৫১৮৯-টিআইবি তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় শীর্ষ ৫ দেশের তালিকায় চতুর্থ বাংলাদেশ তারেক রহমান হ্যাজ এ ড্রিম-মির্জা ফখরুল বিশ্ববাসী দেখবে ৩৬ জুলাই উদ্যাপন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন

আলু নিয়ে অন্ধকার দেখছেন চাষিরা

  • আপলোড সময় : ০৫-০৮-২০২৫ ০২:৫২:৩১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৫-০৮-২০২৫ ০২:৫২:৩১ অপরাহ্ন
আলু নিয়ে অন্ধকার দেখছেন চাষিরা
* আলু নিয়ে বিপাকে চাষি ও হিমাগার মালিকরা
* লাভের আশায় অতিরিক্ত আলু চাষ করে এখন কৃষকের মাথায় হাত
* মোটা অংকের লোকসান গুণতে হচ্ছে
* প্রতি কেজিতে উৎপাদন কৃষকের ১৭ টাকা খরচ হয়েছে

আলু নিয়ে বিপাকে চাষী ও হিমাগার মালিকরা। লাভের আশায় অতিরিক্ত আলু চাষ করে এখন কৃষকের মাথায় হাত। চোখে অন্ধকার দেখছেন। কারণ আশানুরূপ দামের পরিবর্তে তাদের এখন মোটা অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত বছর কৃষক আলুর মূল্য বেশি পাওয়ায় এবার রেকর্ড পরিমাণ এক কোটি ৩০ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। আর চাহিদার তুলনায় ৪০ লাখ টন বেশি উৎপাদন হওয়ায় বর্তমানে আলুর মূল্য অনেক কম। হিমাগার ফটকে এলাকাভেদে প্রতি কেজি আলুর দাম এখন ১৩ থেকে ১৫ টাকা। অথচ প্রতি কেজিতে উৎপাদন কৃষকের ১৭ টাকা খরচ হয়েছে। এর সঙ্গে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ যোগ করলে হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর কেজিতে খরচ প্রায় ২৫ টাকা দাঁড়ায়। বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ে হিমাগারে সাড়ে ১২ টাকা থেকে পৌনে ১৩ টাকায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। আর স্থানীয় বাজারে খুচরা পর্যায়ে ওই আলু ১৫ থেকে ১৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রংপুরে হিমাগারে প্রতি কেজি আলু ১২-১৩ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১৪-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জে হিমাগার ফটকে ১২-১৩ টাকা আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা দরে প্রতি কেজি আলু। যদিও ঢাকায় ২০ থেকে ২৫ টাকায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। অথচ এবার কেজিতে আলুর গড় উৎপাদন খরচ ১৪ টাকা ছিল। তার সঙ্গে হিমাগার ভাড়া যোগ হবে। ফলে সরকারি হিসাবেই প্রতি কেজি আলুতে কৃষক লোকসান গুনছে। আলুচাষী এবং হিমাগার মালিকদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে এবার আলুর দামের যে অবস্থা, তাতে অনেক কৃষকই আগামী বছর আলু চাষে বিমুখ হতে পারে। ফলে আলুর দাম আগামী বছর আবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। গত বছর প্রতি কেজি আলু ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এমনকি এবার মৌসুমের শুরুতে ঠাকুরগাঁওয়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছিল। আর গত বছরের এই সময় আলুর কেজি ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এবার রাজধানীতে প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তথ্যানুযায়ী গত এক মাসে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। কিন্তু গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে দর ৫৬ দশমিক ৯০ শতাংশ কমেছে।
সূত্র জানায়, দেশে আলুর উৎপাদন বাড়লেও রপ্তানি সেই হারে বাড়ছে না রপ্তানি। বিগত ২০২১ সালে দেশ থেকে ৬৮ হাজার ৭৭৩ টন আলু রপ্তানি হয়েছিল। আর ২০২২ সালে রপ্তানি হয়েছিল ৭৮ হাজার ৯১০ টন আলু। কিন্তু ২০২৩ সালে রপ্তানি কমে ৩৩ হাজার টন দাঁড়ায়। ২০২৪ সালে তা আরো কমে ১২ হাজার ১১২ টন হয়। তবে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার টন আলু রপ্তানি হয়েছে। উদ্বৃত্ত থাকায় কৃষক ও হিমাগার মালিকরা আলু রপ্তানি আরো বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ভর্তুকি দিয়ে আলু কেনার আবেদন করেছে। ওই আবেদনের অনুলিপি অর্থ, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়কেও দেয়া হয়েছে। আবেদনে বলা হয়, কৃষকদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিমাগার ফটকে আলুর ন্যূনতম বিক্রয়মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা জরুরি। পাশাপাশি দেশের ৫৫ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে দেয়া চালের পাশাপাশি সরকার ১০ কেজি করে আলু দিতে পারে। এটা সরকার ভর্তুকির মাধ্যমে বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে পারে। বর্তমানে আলুর দাম না পাওয়া এবং সংরক্ষণের অভাবে বিপুল লোকসানের মুখে পড়েছে আলুচাষিরা। সিংহভাগ আলু চাষীই এখন দেনায় পড়েছে। এ অবস্থায় প্রণোদনা, ঋণ মওকুফ এবং আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হওয়া জরুরি। তা না হলে আলুচাষিদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না। আর এ বছর আলুর দাম না পেলে আগামীতে আলু চাষ করবেন কম সংখ্যক চাষি। আর যখন আলুর চাষ কম হবে তখন তুলনামূলক দাম বেড়ে যাবে।
এদিকে হিমাগার মালিকরা বলছেন, ৩৫০টির বেশি হিমাগারে সংরক্ষিত প্রায় ৩৫ লাখ টন আলুর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দাম না বাড়লে হিমাগার থেকে খালাস হবে না। ওই সাত থেকে ১০ লাখ টন আলু যেখানে-সেখানে ফেললে পরিবেশ বিপর্যয়ের মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। আর আলু এভাবে ফেলে দেয়ার চিত্র দেখলে কৃষকরাও পুরোপুরি ভেঙে পড়বেন। বর্তমানে এলাকাভেদে কৃষকের খরচের তুলনায় কেজিতে ১০-১২ টাকা কমে আলু বিক্রি হচ্ছে। তাতে বড় লোকসানে পড়ছেন কৃষক।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, টিসিবির মাধ্যমে বিতরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকে। আলুর ভর্তুকি বিষয়ে অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের ওপর ভর্তুকির বিষয়টি নির্ভর করছে।
এ বিষয়ে কৃষি উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চেনধুরী জানান, কৃষক যাতে তাঁর উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায় সেজন্য ওএমএসের মাধ্যমে আলু বিক্রির উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাছাড়া কৃষকের আলু কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সরাসরি বাজারজাত করবে। সারাদেশে কৃষকের বাজারগুলো সচল করা হবে। সেখানে কৃষকের উৎপাদিত আলু প্রয়োজনে বিনামূল্যে পরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কাজ করছে। কৃষক যদি দাম না পান, ভবিষ্যতে তারা আলু উৎপাদনে আগ্রহ হারাবেন।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ